ট্রেডিং স্টাইল

২৮ সেপ, ২০১৫

এ অধ্যায়ে আমরা শিখব কিভাবে মূলত আপনি ভাল একটি ট্রেডিং সিস্টেমে ট্রেড করবেন। ফরেক্স মার্কেটে ট্রেডিং অনেক কঠিন আপনার জন্য যদি আপনার শক্তিশালী কোন ট্রেডিং ফর্মুলা বা ডিসিপ্লিন না থাকে, তাই স্ট্রেটিজি বা টেকনিক যতই আপনি ভাল জানেন না কেন, একটি প্রপার ট্রেডিং সিস্টেম না জেনে ট্রেড করলে কখনও একজন সফল ট্রেডার হতে পারবেন না। মনে রাখবেন ফরেক্স থেকে আনলিমিটেড ইনকাম করা যায় এটা সত্যি কিন্তু আপনার কাছে যদি সঠিক রসায়ন না থাকে তাহলে এই কথা আপনার জন্য মিথ্যা। অনেক ট্রেডার আছে যারা কয়েকটি টেকনিক শিখে বা না শিখে অন্ধাকারে কয়েকটি ঢিল কারেক্ট করে আর মনে করে সে বুঝি ফরেক্স বুঝে গিয়েছে। কিন্তু একজন ভাল ট্রেডার কখনও এমন মন্ত্রে চলে না, একজন ভাল ট্রেডার শিখতে অনেক সময় নেয় এবং তার ফলাফল লাভ করে সারাজীবন। তাই আপনাদের বলছি, তাড়াহুড়ো না করে আগে সবগুলো বিষয় একটু সময় নিয়ে ভালভাবে আয়ত্ত করুন তারপর দেখুন আপনি সবচেয়ে ভাল করছেন।
যাই হোক কথা অনেক হল এখন আসি মূল আলোচনায়। আপনি কিভাবে বুঝবেন যে সিস্টেমে আপনি ট্রেড করছেন সেটি সঠিক? নিচে কিছু পয়েন্ট দিলাম সেগুলোর সাথে আপনার ট্রেডিং সিস্টেম মিলিয়ে নিন এবং আপনার ট্রেডিং স্টাইলটি নির্বাচন করুন।

ফরেক্স টাইম ফ্রেম ট্রেডিং:
====================================================
অনেক ট্রেডাররা ট্রেডিং টাইমফ্রেম না বুঝে ট্রেড করার কারণে ট্রেডে লস করে। নতুন ট্রেডাররা অনেক বেশি উত্তেজিত হয়ে কম সময়ে লাভ করতে গিয়ে ভুল টাইম ফ্রেমে ট্রেড করে যা তাদের ট্রেডিং স্ট্র্যাটিজির সাথে সামঞ্জস্য নয় এবং শেষে বিপল হয়ে আস্থা হারিয়ে ফেলে। কারণ ভিন্ন ভিন্ন টাইমফ্রেমে মার্কেট চার্ট ভিন্ন ভিন্ন ট্রেন্ড নির্দেশ করে, যেমন আপনি যদি ৫ মিনিটের চার্ট দেখেন হয়ত মার্কেট তখন আপ ট্রেন্ড নির্দেশ করছে আবার একই চার্ট যদি ১ ঘন্টার ফ্রেমে দেখেন তখন হয়ত এভারেজ ট্রেন্ড সেলও হতে পারে, তাই অর্ডারের পূর্বে আপনাকে অবশ্যই আপনার সাথে সামঞ্জস্য টাইমফ্রেমে ট্রেডে ঢুকতে হবে। তবে ফরেক্স মার্কেটে নিশ্চিত ভাবে সময় কখনও মেলাতে পারবেন না। আপনাকে টাইম সিলেক্ট করতে হবে আপনার স্ট্রেটিজি এবং টার্গেটের উপর ভিত্তি করে। মোটামুটি ৩ ধরণের টাইমফ্রেমে আপনার টার্গেট সেট করতে পারেন।
ইনট্রাডে টাইমফ্রেম -১৫ মিনিট
শর্ট টাইমফ্রেম -ঘন্টা
লং টাইমফ্রেম ১ দিন বা তার বেশি

শর্ট টাইম ট্রেডিং:
====================================================
এই পদ্ধতিতে আপনি দুধরণের ট্রেড করতে পারেন-
1. স্কেলপিং
2. ডে-ট্রেডিং

স্কেলপিং:
====================================================
এই ধরণের ট্রেডিং-এ খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে আপনাকে ট্রেডে ঢুকতে হবে এবং ট্রেড থেকে বের হতে হবে যা কয়েক সেকেন্ডও হতে পারে। যেহেতু খুব স্বল্প সময়ের ট্রেড তাই আপনাকে প্রচুর ট্রেড করতে হবে যার পরিমাণ দৈনিক ১০০ হতে পারে। প্রতি ট্রেডে খুব সিমিত প্রফিট করবেন যেমন ৩-পিপস। মিনিটের চার্টের উপর ভিত্তি করে একটি গতিশীল মার্কেট ট্রেন্ডে এই ট্রেড করবেন।

স্কেলপিং ট্রেডের সুবিধাঃ
====================================================
1. সামান্য রিস্কে ট্রেড।
2. হাই সিস্টেম একুরিসি।
3. ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসের প্রয়োজন নেই।
4. হঠাৎ মার্কেটে পরিবর্তনেও রিস্ক থাকে না।
5. প্রতিদিন অনেক বারেই সুবিধা পাওয়া যায়।

স্কেলপিং ট্রেডের অসুবিধাঃ
====================================================
1. এই ট্রেডে প্রচন্ড মানসিক অস্থিরতা কাজ করবে।
2. ফাস্ট অর্ডার এক্সিকিউশন ব্রোকার হতে হবে।
3. ট্রান্সজেশন কস্ট অনেক বেশি দিতে হবে। যদি দৈনিক ২০টা ট্রেড করেন ৬০ পিপস স্প্রেড দিতে হবে।

ডে-ট্রেডিং:
====================================================
এই ধরণের ট্রেড কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে সারাদিন ব্যাপী হতে পারে। ট্রেডারদেরেই সকল ট্রেডে ঢুকতে খুবই ডিসিপ্লিন এবং ধৈর্য্যের সাথে মার্কেট ট্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এই ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ট্রেডাররা টেকনিক্যাল স্ট্রেটিজি ফলো করেন। এই সিস্টেমে দৈনিক ট্রেডের সংখ্যা ১-টি হয়। ডে ট্রেডিং ট্রেডের জন্য -৩০ মিনিটের চার্টে ট্রেড করা উত্তম।

ডে-ট্রেডের সুবিধাঃ
====================================================
1. অতি মাত্রায় ইনকাম করা যায়।
2. স্বল্পমেয়াদী ট্রেন্ডে ট্রেড করতে পারা যায়।
3. মার্কেটে পরিবর্তনেও রিস্ক থাকে না।
4. সব সময় বিকল্প একটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়।

ডে-ট্রেডের অসুবিধাঃ
====================================================
1. একটি সঠিক নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ট্রেড করতে হয়।
2. ট্রেডিং আউটপুট পেতে অতিমাত্রায় ধৈর্য্য লাগে।
3. ভিন্ন ভিন্ন মার্কেটে ভিন্ন ভিন্ন স্ট্রেটিজি এপ্লাই করতে হয়।
4. প্রতিনিয়ত মার্কেট নিউজের সাথে আপডেট থাকতে হয়।

লং টাইম ট্রেডিং:
====================================================
এই পদ্ধতিতেও আপনি দুধরণের ট্রেড করতে পারেন-
1. সুয়িং ট্রেডিং
2. পজিশন ট্রেডিং

সুয়িং ট্রেডিং:
====================================================
এই প্রকার ট্রেডিং-এর মেয়াদ -৫ দিনের মত হয়। মিডিয়াম টার্ম ট্রেন্ডে এই ট্রেড করার সুবিধা পাওয়া যায় এবং যেকোন সময়ে ট্রেডে ঢোকা যায়। দিনে কয়েকবার ট্রেড মনিটর করতে হয় এবং ১-ঘন্টার চার্টে এই ট্রেড করতে হয়। এই ট্রেডের জন্য স্ট্রেটিজি হিসেবে টেকনিক্যাল এনালাইসিসের ডাবল টপ / বটম, ট্রাইয়াঙ্গেল চার্ট প্যাটার্ন বেশি ব্যবহার হয়।

সুয়িং ট্রেডের সুবিধাঃ
====================================================
1. এক ট্রেডে অনেক আয়ের সম্ভাবনা থাকে।
2. ডে ট্রেডিং-এর চেয়ে এই ট্রেডে রিটার্ন বেশি থাকে।
3. ট্রেডারদের লম্বা সময় কাল থাকে বলে মার্কেট ফলিং-এ অস্থিরতা থাকে না।
4. ট্রানসেশন কস্ট কম।
5. মানসিক চাপ কম থাকে।

সুয়িং ট্রেডের অসুবিধাঃ
====================================================
1. লো ইনভেস্টমেন্ট করা যায় না।
2. দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় রিটার্নের জন্য।
3. এই ধরণের ট্রেডিং সিস্টেম একুরিসি ভাল নয়।
4. সেশন ব্রেকে রিস্ক থাকে।

পজিশন ট্রেডিং:
====================================================
এটি হচ্ছে ফরেক্স মার্কেটের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ট্রেডিং যা কয়েক দিন থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এই পদ্ধতিতে ট্রেডারদের সব সময় লং টাইম ফোরকাস্টের উপর ট্রেড করতে হয়। ৪ ঘন্টা ডে চার্টের উপর ভিত্তি করে এই ট্রেডে অর্ডার করতে হয়। এই ট্রেডে ডেইলি ২-বার মনিটরিং করলে চলে। দীর্ঘ সময়ের পিভট পয়েন্ট ব্রেকে এই ট্রেড করা যায়।

পজিশন ট্রেডের সুবিধাঃ
====================================================
1. ৫০০ পিপসের বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়।
2. মার্কেট নেগেটিভ মুভে ট্রেডার অস্থিরতা থাকে না।
3. ট্রানসেশন কস্ট কম।
4. মানসিক চাপ কম থাকে।

পজিশন ট্রেডের অসুবিধাঃ
====================================================
1. লো ইনভেস্টমেন্ট করা যায় না।
2. দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হায় রিটার্ন আর জন্য।
3. এই ধরণের ট্রেডিং সিস্টেম একুরিসি ৫০%
4. সেশন ব্রেকে রিস্ক থাকে।

কোন স্টাইলে ট্রেড করবেনঃ
====================================================
প্রত্যেক ট্রেডারের একটি স্বাধীন চেতনা, ট্রেডিং স্ট্রেটিজি, উদ্দেশ্য এবং সময়ের অভিরুচি থাকে, তাই কে কোন স্টাইলে ট্রেড করবেন তা একান্তই নির্ভর করছে আপনার টার্গেট এবং চাওয়ার উপর। যেমন, আপনি যদি একজন চাকুরীজীবী হন তাহলে আপনার জন্য সুয়িং বা ডে ট্রেডিং উত্তম হতে পারে। অথবা আপনি যদি প্রতিনিয়ত চার্টে চোখ রাখতে পারেন তাহলে স্কেল্পিং ভাল হতে পারে। কিংবা আপনি যদি ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসে ট্রেড করতে চান তাহলে আপনার জন্য লং টাইম বা পজিশন ট্রেড ভাল হতে পারে। তাই আপনার চাহিদা কি এবং কি ধরণের সময় ব্যায় করতে পারবেন ট্রেডিং-এর জন্য সব হিসাব কষে তারপর সিদ্ধান্ত নিন কোন ট্রেডিং স্টাইলে আপনি ট্রেড শুরু করবেন। তবে সিদ্ধান্ত আপনার যাই হোক না কেন রিয়েল ট্রেডে যাওয়ার আগে অবশ্যই ডেমোতে আপনার স্টাইল পারফেক্ট প্রুভ করে নিবেন।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যোগাযোগ

নাম

ইমেল *

বার্তা *